নিজস্ব প্রতিবেদক: তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তাইওয়ানকে নানা সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি ভূখণ্ডটির প্রধান পৃষ্ঠপোষকও ওয়াশিংটন। এমনকি চীন তাইওয়ানে হামলা চালালে মার্কিন বাহিনী ভূখণ্ডটিকে রক্ষা করবে বলে মন্তব্যও করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আর তাই তাইওয়ান ইস্যুতে চীন-মার্কিন সম্পর্কে উত্তেজনার পারদ চড়েই রয়েছে। এমন অবস্থায় ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতা’ চীন-মার্কিন সম্পর্কের জন্য বাধা বা প্রতিবন্ধক বলে আখ্যায়িত করেছে বেইজিং। রোববার (২৮ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান (উভয় দেশের) যোগাযোগ অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে আলোচনা করেছেন। তবে ওয়াং জোর দিয়ে বলেছেন, ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতা’ চীন-মার্কিন সম্পর্কের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি তৈরি করেছে। আল জাজিরা বলছে, সান ফ্রান্সিসকোতে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন সম্মেলনের সাইডলাইনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মিলিত হওয়ার দুই মাসেরও কিছু বেশি সময় পর শনিবার থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ওয়াং এবং সুলিভান সাক্ষাৎ করেন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সান ফ্রান্সিসকো বৈঠকে যেসব ঐকমত্য হয়েছিল সেগুলো বাস্তবায়নে এবং চীন-মার্কিন সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল বিষয়গুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করার বিষয়ে উভয়ের মধ্যে অকপট, সারগর্ভ এবং ফলপ্রসূ কৌশলগত আলোচনা হয়েছে। হোয়াইট হাউস বলেছে, উভয় কর্মকর্তার মধ্যে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকটি দুই দেশের মধ্যে ‘যোগাযোগের উন্মুক্ত লাইন বজায় রাখার প্রচেষ্টার অংশ’। বৈঠকে সুলিভান জোর দিয়ে জানিয়েছেন, যদিও যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মধ্যে রয়েছে, তবে সেই প্রতিযোগিতা যেন সংঘাত বা সংঘর্ষের দিকে না যেতে পারে তা উভয় দেশকে নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বেইজিং এবং ওয়াশিংটন এর আগে প্রযুক্তি, বাণিজ্য, মানবাধিকার এবং তাইওয়ান সম্পর্কিত ইস্যুতে মুখোমুখি অবস্থানে চলে এসেছিল।সম্প্রতি তাইওয়ানের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি (ডিপিপি) তৃতীয় মেয়াদে জয়লাভ করেছে। চীন তাইওয়ানকে তার নিজের অঞ্চল হিসাবে দাবি করলেও ডিপিপি চীনের সেই দাবির বিরোধিতা করে থাকে। এই সপ্তাহে দুই মার্কিন আইনপ্রণেতা তাইওয়ানের নতুন নেতা লাই চিং-তের সঙ্গে দেখা করেছেন। ভোটের দুই দিন পর লাইকে অভিনন্দন জানাতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর পর তারা ছিলেন তাইওয়ানে পৌঁছানো দ্বিতীয় কোনও মার্কিন দল। তবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, ওয়াং সুলিভানের সাথে বৈঠকে জোর দিয়ে বলেছেন- তাইওয়ান ‘চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং তাইওয়ানের আঞ্চলিক নির্বাচন এই মৌলিক বাস্তবতায় কোনও পরিবর্তন করতে পারে না যে, তাইওয়ান চীনের অংশ’। এতে আরও বলা হয়েছে, ‘তাইওয়ান প্রণালীজুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতার সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো তথাকথিত ‘তাইওয়ান স্বাধীনতা’ আন্দোলন। চীন-মার্কিন সম্পর্কের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জও হচ্ছে ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতা’। বৈঠকের আগে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, চীন গত শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টার মধ্যে তাইওয়ানের আশপাশে ছয়টি নৌবাহিনীর জাহাজ এবং এসইউ-৩০ যুদ্ধবিমানসহ ৩৩টি বিমান পাঠিয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১৩টি যুদ্ধবিমান তাইওয়ান প্রণালী অতিক্রম করেছে। আর এটি মূলত এই প্রণালীটি তাইওয়ান এবং চীনের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক সীমানা হিসেবে পরিচিত। হোয়াইট হাউস বলেছে, সুলিভান ‘তাইওয়ান প্রণালীজুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন’।তাইওয়ান প্রণালীর উভয় পাশের এই সমস্যা ছাড়াও কর্মকর্তারা মিয়ানমার, ইরান এবং মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ চীন সাগর এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধসহ অন্যান্য বিষয়েও আলোচনা করেছেন বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে। উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছে, দুই দেশের প্রেসিডেন্ট নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে কৌশলগত দিকনির্দেশনা প্রদান করবেন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ও স্তরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বিনিময়কে আরও বাড়াবেন বলে চীনা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এদিকে হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে বলেছে, দুই পক্ষ প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যে একটি কল স্থাপন করবে। ‘উচ্চ পর্যায়ের কূটনীতি’ প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে এটি করা হবে বলেও হোয়াইট হাউস জানিয়েছে। বৈঠকে কর্মকর্তারা মাদকবিরোধী সহযোগিতার বিষয়ে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ চালু করতে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়ে একটি আন্তঃসরকারি সংলাপ স্থাপনেও সম্মত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। হোয়াইট হাউস আরও বলেছে, সুলিভান এবং ওয়াং ‘মিলিটারি-টু-মিলিটারি যোগাযোগ পুনরায় শুরু করার সাম্প্রতিক অগ্রগতি স্বীকার করেছেন এবং এই চ্যানেলগুলো বজায় রাখার গুরুত্ব সম্পর্কেও উল্লেখ করেছেন।’উল্লেখ্য, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বে চীনা মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং। ১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করার পর তাইওয়ান দেশটির মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদিও তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং। এরপর থেকে তাইওয়ান নিজস্ব সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।