নিজস্ব প্রতিবেদক : চুয়াডাঙ্গা সদর থানাধীন সুবদিয়া গ্রামের কাচারীপাড়ার আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজাই শেখ হত্যার প্রকৃত কারণ দ্রুত সময়ের মধ্যে উদঘাটন করেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে মূল ঘাতক ও তার সহযোগীকে। উদ্ধার করা হয়েছে খুনের কাজে ব্যবহৃত ধারালো চাকু, মোটরসাইকেল, ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও টচলাইট। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সুবদিয়া(পূর্ববাড়ার) আব্দুর সেলিমের ছেলে রুবেল মিয়া (২৩) এবং একই গ্রামের অনিছের ছেলে সোহেল রানা (২০)। মঙ্গলবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলনে কক্ষে প্রেস ব্রিফিং করে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান। প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, চুয়াডাঙ্গা সদর থানাধীন সুবদিয়া কাচারীপাড়া গ্রামের মোঃ সানোয়ার হোসেন বাদী হয়ে সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন যে, ভিকটিম আব্দুর রাজ্জাক@ রাজাই শেখ প্রতিদিনের ন্যায় সন্ধ্যা আনুমানিক ৭ ঘটিকার দিকে বাড়ী থেকে বের হয়ে বিভিন্ন কাজ শেষে দোকান থেকে চা খেয়ে বাড়ী ফেরে। কিন্তু ঘটনার দিন গভীর রাত হলেও ভিকটিম আর বাড়ী ফিরেনি। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজির একপর্যায়ে ১ জুন সকাল ৭ ঘটিকার সময় লোকমুখে সংবাদ পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানাধীন শংকরচন্দ্র ইউনিয়নের যুগিরহুদা টু পুরাতন ভান্ডারদহ গামী পাকা রাস্তার পাশে জনৈক আপিল এর ফসলী জমির পূর্ব-দক্ষিণ কোণে পাকা রাস্তার ধারে যেয়ে দেখতে পান ভিকটিম আব্দুর রাজ্জাক@ রাজাই শেখ এর গলাকাটা লাশ পড়ে আছে। বাদীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে চুয়াডাঙ্গার সদর থানায় একটি মামলা হয় যাহার মামলা নং-০১ তারিখ-০১ জুন ২০২৪ ধারা-৩০২/৩৪ রুজু করা হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলার পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান, পিপিএম-সেবা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নৃশংস হত্যাকান্ডের মূলরহস্য উদঘাটন এবং ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত আসামী গ্রেফতারের জন্য জেলা গোয়েন্দা শাখা, সদর থানার পুলিশ সহ জেলা পুলিশের একাধিক টিম কে নির্দেশনা প্রদান করেন। পুলিশ সুপারের নির্দেশনা ও পরামর্শক্রমে চুয়াডাঙ্গা জেলা গোয়েন্দা শাখা, সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল ও সদর থানা সহ জেলা পুলিশের একাধিক টিম নৃশংস হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন। চুয়াডাঙ্গা সদর সার্কেল আনিসুজ্জামান এর দিকনির্দেশনায় সদর থানা, জেলা গোয়েন্দা শাখা, সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম সমন্বিতভাবে গোপন ও প্রকাশ্য তদন্ত করে ঘটনার সাথে জড়িত আসামী সুবদিয়া গ্রামের আব্দুর সেলিম এর ছেলে মোঃ রুবেল মিয়া কে গত ০২ জুন ২০২৪ তারিখ রাত ১২:৩০ ঘটিকায় সুবদিয়া গ্রামে তার নিজ বাড়ী থেকে গ্রেফতার করে আসামীর স্বীকারোক্তি মোতাবেক অপর সহযোগী আসামী একই গ্রামের আনিস এর ছেলে সোহেল রানা কে একই তারিখ রাত ০১:৫৫ ঘটিকায় সুবদিয়া গ্রামে আসামীর নিজ বাড়ী থেকে গ্রেফতার করা হয়। আসামীদের নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদে আটকৃত আসামিদ্বয় নিজেকে এই খুনের ঘটনার সাথে জড়িয়ে স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য প্রদান করেন। আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী যেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে নৃশংসভাবে খুন সংঘঠন করে আলামত হিসেবে সে ধারালো ছুরি ও ভিকটিম এর ব্যবহৃত মোবাইলটি উদ্ধার করা হয়। রাজ্জাক শেখের খুন সংঘঠনের নেপথ্যে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়। আটককৃত আসামিদ্বয়কে গত ০২ জুন ২০২৪ তারিখ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়। আসামীদ্বয় বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ মোতাবেক স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। তদন্তকালে জানা যায় ভিকটিম আব্দুর রাজ্জাক@ রাজাই শেখ কবিরাজি করে মানুষের বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসা প্রদান করত। আসামী রুবেল মিয়া ও তার স্ত্রী শারীরিক চিকিৎসার জন্য ভিকটিম এর সরণাপন্ন হলে গত ৩১ মে ২০২৪ তারিখ সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৭ ঘটিকায় ভিকটিম জ্বীনের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে আসামী রুবেল ও তার স্ত্রী’কে সদর থানাধীন হোগলডাঙ্গা নবগঙ্গা নদীর ব্রিজের সন্নিকটে পান বরজের কাছে নির্জন জায়গায় নিয়ে যায় এবং আসামীকে সিগারেট আনতে দোকানে পাঠায়। কিছুক্ষণ পরে আসামী রুবেল পানবরজে এসে ভিকটিম রাজ্জাক ও তার স্ত্রীকে খুজে না পেয়ে আসামীর স্ত্রীর মোবাইলে কল দিলে বন্ধ পায়। খোঁজাখুজির একপর্যায়ে আনুমানিক ৩৫/৪০ মিনিট পরে ভিকটিম ও আসামীর স্ত্রী পানবরজের নিকট ফিরে আসলে আসামী তার স্ত্রীকে দেখে খারাপ কোন কাজ করেছে বলে সন্দেহ পোষণ করে। পরবর্তীতে আসামী বাড়ীতে এসে তার স্ত্রী’কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার স্ত্রী কান্নাকাটির একপর্যায়ে স্বীকার করে ভিকটিম আব্দুর রাজ্জাক কবিরাজ চিকিৎসা দেওয়ার নামে সম্ভ্রমহানি করেছে। পরবর্তীতে ঐ একই দিন আসামী রুবেল তার সহযোগী অপর আসামী সোহেল রানা’কে সাথে নিয়ে বাড়ী থেকে বের হয়ে ভিকটিম রাজ্জাককে তার চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রীর জ্বীন তাড়ানোর কথা বলে কৌশলে সুবদিয়া সিপি বাংলাদেশ লিমিটেড কোম্পানীর সামনে থেকে ভিকটিমকে মোটরসাইকেলের মাঝে বসিয়ে পুরাতন ভান্ডারদহ অভিমুখে নিয়ে যেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে মোটরসাইকেলের পিছনে বসা আসামী রুবেল মিয়া তার দখলে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে ভিকটিমের গলায় পোচ দিয়ে মোটরসাইকেল থেকে রাস্তায় ফেলে দেয়। পরবর্তীতে ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য জবাই করে ভিকটিমের মৃত্যুদেহ রাস্তার পাশে গাছপালা দিয়ে ঢেকে রেখে বাড়িতে চলে যায়। তদন্তে প্রাপ্ত এ সকল তথ্যের যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে জানান চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার ।