নিজস্ব প্রতিবেদক : চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান কেরু এ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড । প্রতিষ্ঠানটি আগে বেশ সুনামের সাথে চললেও বর্তমানে কিছু অসাধু কর্মকর্তা বা কর্মচারিরা চুরিও দুর্নীতির আতর ঘর বানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ঘিরে চাকরি প্রমোশন, বদলি, টেন্ডার ওপেন ঘুষ ও অর্থ বাণিজ্য সহ বিভিন্ন অনিয়ম এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। যা দেখার কেউ নেই বলে মনে করছেন সচেতন মহল। সম্প্রতি নিয়োগ বানিজ্য ও ডিস্টিলারি বিভাগে রেকর্ড পরিমান চুরির ঘটনা নিয়ে বেশ চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশ হলেও তেমন কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি কর্তৃপক্ষের। নামকোয়াস্তে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। ইতিপূর্বে বহু ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের পর উল্লেখযোগ্য কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি বলে তদন্ত কমিটি নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। গত ১৫ জুন ডিস্টিলারির একজন কর্মচারি কন্টিনারে করে মালামাল চুরি করার সময় সিসি ক্যামেরাই ধরা পড়লেও তা অদৃশ্য কারণে চাপা পড়ার কথা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে । শুধু তাই নাই ডিস্টিলারির একটি ভ্যাট থেকে প্রায় ১৩ হাজার লিটার ডিএস স্প্রিট উধাও হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মিল এলাকায় সাধারন মানুষ, আখচাষী ও শ্রমিক কর্মচারি সহ অনেকেই সারা বাংলাদেশে মূর্তিমান আতঙ্কের নাম রাসেলস ভাইপার সেই রাসেলস ভাইপারের সাথে কেরুর কিছু অসাধু কর্মকর্তার তুলনা করে বলেন বর্তমানে কেরুর ডিস্টিলারির কতিপয় শ্রমিক ও কর্মচারিরা বিশ্বের আতঙ্ক রাসেলস ভাইপারের চেয়েও ভয়ংকর। কারণ রাসেল ভাইপার তো ছোবল মারে, আর এরা সব গিলে ফেলে। ডিস্টিলারি বিভাগের বর্তমান বন্ডেড ইনচার্জ জাহাঙ্গীর হোসেনের অভিযোগে জানাগেছে, আমাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার সময় ৩ নম্বর ভ্যাট গোডাউনে ডিএস স্প্রিটের। গভিরতা ছিল ১০৯ ইঞ্চি। যার বাস্তবিক মজুদ ৩৫ হাজার ৫ শত ১২ দশমিক ২৩ লিটার। কিন্তু হস্তান্তর তালিকায় মজুদ রয়েছে ৩৯ হাজার ৭ শত ১১ দশমিক ৫৫ লিটার। ৭ নম্বর ভ্যাটের গভীরতা ৫৩ ইঞ্চি যার বর্তমান বাস্তবিক মজুদ রয়েছে ৪ হাজার ৮ শত ৪ দশমিক ৩০ লিটার। কিন্তু হস্তান্তর তালিকায় মজুদ হয়েছে ১৩ হাজার ৭ শত ৯৫ দশমিক ৭৩ লিটার। এ ছাড়া ১০ নম্বর ভ্যাটে ৪ ইঞ্চি মাল কম আছে বলে অভিযোগ করা হয়। যার ফলে প্রায় মজুদ অনুযায়ী ১৩ হাজার ১৯০.৭৫ লিটারের বেশি মালামাল কম থাকায় আমি দায়িত্ব গ্রহণ করিনি। এ ব্যাপারে আমি গত ২ মে দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। বিষয়টি কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করেন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। এ নিয়ে কেরু ক্যাম্পাসে চলছে আলোচনা সমালোচনা ঝড়। মিল এলাকার অনেক শ্রমিক সাংবাদিকদের কাছে মুঠোফোনে জানান, গত ১৫ জুন তারিখ একজন ডিস্টিলারির কর্মচারি মালামাল নিয়ে চলে যাওয়ার দৃশ্য সিসি ক্যামেরাই দেখা গেছে। বিষয়টি জানাজানি হলে কেরুর এমডি’র হাত পা ধরে রেহায় পাওয়ার চেষ্টা করলেও হয়তো রেহায় পায় নি। মিলের ভাল বা মঙ্গল চাই এমন কিছু শ্রমিক কর্মচারিরা সাংবাদিকদের কাছে জানান সদ্য মৌসুমি থেকে স্থায়ী হওয়ার জন্য যে অর্থ বাণিজ্য কেরুতে হয়েছে যা সর্ব কালের রেকর্ড ভঙ্গ করা হয়েছে। মৌসুমি থেকে স্থায়ী করনে অনিয়মের খবর বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনে পৌছালে করপোরেশন সচিব কেরুর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সহ ৫ জিএম দের জবাব চেয়ে চিঠি প্রদান করেন। এর আগে কেরু এন্ড কোম্পানি সহ দেশের সবকটি চিনিকলের নিয়োগ কার্যক্রম দ্রুত স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট হয় এবং স্থায়ী করার বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগে চুয়াডাঙ্গা আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়েছে বলে জানাগেছে । যেখানে মিলের এমডিসহ ৫ মহা ব্যাবস্থাপকের নামে এবং হেড অফিসের দুই কর্মকর্তার নামে চুয়াডাঙ্গা আদালতে থেকে সমন জারি করা হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের ১৭ তারিখ চুয়াডাঙ্গা আদালতে স্ব-শরীরে হাজির হয়ে জবাব দিতে হবে বলে সমনে উল্লেখ করা হয়েছে। অনেকেই সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে জানান, বর্তমানে চাষীরা আখ চাষ থেকে বেশ কয়েকটি কারণে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ডিস্টিলারিতে অবাধে চুরি, আখচাষীদের সন্তানদের কেরুতে চাকরী না দেয়া, কেরু উচ্চ বিদ্যালয়ে আখ চাষীদের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার সুযোগ না পাওয়া দুর্নীতির মহাউৎসব, ওপেন ঘুষ বাণিজ্য অন্যতম। বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন সহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলেও জানাগেছে । এবিষয়ে কেরু এন্ড কোম্পানির জিএম ডিস্টিলারি রাজিবুল হাসান বলেন বিষয়টি আমি শুনেছি তবে বিষয়টি আমার না সেহেতু এবিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। আমার দায়িত্ব উৎপাদন করা আমি উৎপাদন করে তাদেরকে দিয়েছি তারা কিভাবে রেখেছে তারা জানে। তবে এটা জিএম প্রশাসনের দায়িত্ব তিনার কাছে জানতে পারেন ঘটনা কি ঘটেছে। এবিষয়ে মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইউসুফ আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি তদন্ত কমিটি গঠনের কথা স্বীকার করলেও ঘটনার বিষয়ে বক্তব্য দিতে অপারকতা প্রকাশ করেন। এঘটনায় কেরুর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেনের মুটো ফোনে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ না করার কারণে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হইনি।