নিজস্ব প্রতিবেদক : চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষকলীগের সভাপতি গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দারকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার বিকেল ৫ টার দিকে ফল কিনে মোটরসাইকেলে সরিষাডাঙ্গা গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার সময় পথে নীলমণিগঞ্জ মসজিদের ফটকের সামনে এই হত্যা কান্ডের ঘটনা ঘটে। গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দারের মৃত্যু ও সাবেক যুবলীগ নেতা আরেফিন আলম রঞ্জুর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে ৪ জনের মৃত্যুর খবরে জেলাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে অনেকে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও তাদের অনেকের মধ্যেই আবার সংশয় কাজ করছে। জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেলে মোমিনপুর ইউনিয়নের নীলমণিগঞ্জ বাজারে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও কৃষকলীগ নেতা গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দারকে (৫৭)। স্থানীয় বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দার মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে বাজার থেকে বাড়ির জন্য কিছু ফল কেনেন। ফল কিনে মোটরসাইকেলে সরিষাডাঙ্গা গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার সময় পথে দুর্বৃত্তরা দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নীলমণিগঞ্জ মসজিদের ফটকের সামনে তাঁর গতি রোধ করে। এরপর তারা তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত জখম করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কৃষক লীগের এই নেতার মাথা, কপাল, ঘাড় ও কোমরে বড় ধরনের ক্ষতের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় লোকজন তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে সদর উপজেলার বোয়ালমারী গ্রামে তিনি মারা যান। নীলমণিগঞ্জ বাজারের কয়েকজন বলেন, কবিখালী গ্রামের একজন মাংস বিক্রেতার নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা এই হামলা চালিয়েছেন। তাদের ভাষ্যমতে, চেয়ারম্যান থাকাকালীন গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দার কবিখালী গ্রামের ওই মাংস বিক্রেতাকে সালিশ-বিচারের মাধ্যমে জরিমানা ও শাস্তি দিয়েছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, তারই প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়। যা মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা সাবেক এই চেয়ারম্যানের হত্যার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, খুনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবগত করা হবে। অপরদিকে, গত সোমবার দুপুরে শহরের সিনেমা হল পাড়ার যুবলীগ নেতা আরেফিন আলম রঞ্জুর বাড়িতে নিহত হওয়া ৪ যুবকের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন, চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের হাটকালুগঞ্জ এলাকার সুমন হোসেনের ছেলে তাফিম ফেরদৌস (১৭), আলমডাঙ্গা নাগদাহ গ্রামের মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে ও চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের বেলগাছি ঈদগাহ পাড়ার মোতালেব হোসেন রনির ভাগ্নে সাকিব হোসেন ডিজে (২০)। সে বেলগাছির একটি আটার দোকানে কাজ করতো পাশাপাশি আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো। নিহত আরেক কিশোর বেলগাছি ঈদগাহপাড়ার সৌদি প্রবাসী শিলন হোসেনের ছেলে ও চুয়াডাঙ্গা একাডেমি স্কুলের ছাত্র সাকিব হোসেন (১৬) এবং চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের শান্তিপাড়ার মৃত সন্টু ড্রাইভারের ছেলে সাইম হোসেন (১৬)। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, নিহতদের কেউই কোন ধরনের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলো না। এর আগে ওইদিন দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে অজ্ঞাত পরিচয় একদল লোক আরেফিন আলম রঞ্জুর বাড়ির প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় যুবলীগ নেতা রঞ্জু তার ব্যক্তিগত শটগান দিয়ে একটি গুলি বর্ষন করেন। এরপর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে একদল লোক সেখানে আসে এবং বাড়ির ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে যায় ও ভাংচুর শুরু করে। ছয়তলা বাড়িটি ভাঙচুর চলাকালে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। আগুন নেভানোর সময় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পুড়ে অঙ্গার হওয়া চার যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে। পরে মরদেহগুলি বাড়ির ছাদে একত্রিত করে। এরপর মঙ্গলবার বিকেলে সদর হাসপাতাল মর্গে চারটি লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে লাশ দাফনের জন্য পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।