• বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৪২ অপরাহ্ন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে গরুর গোবর থেকে তৈরী হচ্ছে জ্বালানি : সহস্রাধিক নারীর কর্মস্থান

grambarta / ৯১ ভিউ
প্রকাশের সময় : সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : গরুর গোবর থেকে ঘুটাঁ বানিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের সহস্রাধিক নারী। তবে এই কাজের জন্য কাউকে সরকারি বা বেরসারকারি ভাবে করা হয়নি কারো আর্থিক সহায়তা। নিজ উদ্যোগে নারীদের নিপুন হাতে তৈরি করা এই ঘুঁটা বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছে অনেকে। একদিকে যেমন বাড়তি আয় হচ্ছে অন্যদিকে অনেক গৃহিণী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। গোবর থেকে এই ঘুটাঁ তৈরিতে লাগে না কোন মূলধন। বাড়ির পালিত গরুর গবর থেকেই তৈরি হয় এই জ্বালানি । অনেক আগে থেকেই এই জেলার লোকজন গরু পালন করে আসছে। সেই সাথে তৈরি করা হচ্ছে ঘুটাঁ। এলাকাবাসী জানায় বাংলাদেশ স্বাধীনের পর থেকেই এই অঞ্চলের মানুষ এই ঘুটাঁ তৈরি করে থাকে। যা প্রতিটি নিম্ন আয়ের পরিবার গুলোর একটা বাড়তি আয় হিসেবে ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ, জামাকাপড় ও সংসারের খরচ জোগাতে বেশ সহায়ক ভূমিকা রাখে। শুধু তাই নয় গরিরেব ঘরের এ গৃহীনরা তিল তিল করে টাকা জমিয়ে আকস্মিক বিপদের সময়ও কাজে লাগায়। এই ঘুটাঁ গ্রাম এলাকা থেকে শত শত ভ্যান ক্রয় করে জেলা ও জেলার বাইরে বিক্রি করে। সরজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুটাঁ তৈরীর সময় প্রায় ৩০-৩৫ জন গৃহিনী বলেন তাদের এ কাজটি সংসারের কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে করা যায়। শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের এক গৃহিনী ও অনার্স পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী জানান , আমার স্বামী আমাকে চারটি গরু কিনে দিয়েছেন। লেখা্পড়া ও সংসারের কাজ করেও আমি গরু পালন করি। এটি আমার এক ধরনের নেশা। তার সাথে সাথে গরুর গোবর থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০টি ঘুটাঁ তৈরী করে বাঁশে বেঁধে সারিবন্ধ ভাবে দাঁড় করিয়ে শুকাই। মাঝে মাঝে এপিট ওপিট উল্টাইতে হয়। শুকিয়ে গেছে বাঁশের তৈরী করা মাচায় গুছিয়ে রাখি। মাস থেকে বা ১৫দিন পর ভ্যান নিয়ে আসা পাইকার বা ক্রেতাদের কাছে ঘুটাঁ প্রতি দুই টাকা দরে বিক্রী করি। তাতে প্রতিমাসে আমার আয় হয় প্রায় ১৮০০ টাকা। যার মধ্যে থেকে আমার স্বামীকে কিছু টাকা দিই এবং কিছু টাকা আমার কাছে রেখে বিভিন্ন কাজে খরচ করি। এ কাজে আমার লেখাপড়া ও সংসারের কোন ক্ষতি হয় না। শুধু বাড়তি কিছু পরিশ্রম করতে হয়। তিনি আরো জানান, এ ঘুটাঁ দিয়ে সারা বছর জ্বালানীর যোগান দেয়। দাই পুখুরিয়া ইউনিয়নের এক অসহায় গৃহিনী আলেয়া খাতুন জানান,আমার স্বামী একজন শ্রমিক। অতি কষ্টে একটি গুরু কিনে দিয়েছেন। এটিই আমাদের সম্বল। এ গরুর গোবর থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০টি ঘুটাঁ বা নুনদা তৈরী করে বিক্রী করে গরুর খাবার ক্রয় করি । চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে শিবগঞ্জের লক্ষ্মীপুর গ্রামের গৃহবধূ আয়েশা খাতুন বলেন, প্রতি মাসে তিনি দেড় হাজার ঘুটাঁ বানাতে পারেন। সেগুলো রাস্তার পাশে অথবা বাড়ির মধ্যেই শুকিয়ে বিক্রি করেন। সেই টাকা দিয়ে আমরা বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের পড়ার খরচ বহন করি। এ কাজে খরচ বলতে শুধু পাটকাঠি কিনতে হয়। মনাকষা ইউনিয়নের পারচৌকা গ্রামের সনাতন ধর্মানুসারী শ্রী সবিতা সাহা জানান আমার স্বামী একজন গরু খামারি । ছোট-বড় দিয়ে আমার ৩৫টি গরু আছে। দিনের বেলায় আমার স্বামী সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে গরুগুলো চরায়। শুধু রাতের গোবর দিয়ে প্রতিদিন ১০০ টি ঘুটাঁ তৈরী করি। সপ্তাহ বা ১৫দিন পর পর ভ্যানওয়ালার কাছে দুই টাকা দরে বিক্রী করি। সে টাকা দিয়ে গরুর জন্য খাবার ক্রয় করি। মাঝে মাঝে সংসারের অন্যান্য কাজেও খরচ করি। আমি এ কাজটি সংসারের অন্যান্য কাজ শেষে এই ঘুটাঁ গুলো তৈরি করি। তবে মাঝে মাঝে আমরা শাশুড়ী সাহায্য করেন। আমার কাছে কাজটি খুব আনন্দের। কারণ এর মাধ্যমে আমি আমার কর্মের সন্ধান পেয়েছি। বীর মুক্তিযোদ্ধা তমলিম উদ্দিন মাস্টার বলেন ঘুটাঁ চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্য। আমাদের মা খালাবরাও এ কাজটি করেছেন। এর মাধ্যমে গ্রাম্য মহিলারা সাংসারিক কাজের পর ঘুটাঁ তৈরী করে সংসারের স্বচ্ছলতা আনে এবং সংসারে সারা বছরের জ্বালানীর ব্যবস্থাও হয়। ঘুটাঁ জ্বালানী হিসাবে ব্যবহারিত হওয়ায় গাছ কাটা কম হয় এতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়।এটি আমাদের এলাকায় কুটির শিল্পের পর্যায়ে পড়ে। শিবগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার কাঞ্চন কুমার দাস বলেন, ঘুটাঁ একটি উত্তম জ্বালানী। এ জ্বালানীর ছাই একটি উত্তম সার। এই ঘুটাঁ তৈরীর কারিগর জেলার শত শত মহিলা বাড়তি আয় করতে পারে। এবিষয়ে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সকল নারী উদ্যোক্তাদের কুটির শিল্পের আওতায় আনার জন্য চেষ্টা কবরো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর