নিজস্ব প্রতিবেদক : “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি না হলে এই একাডেমিও তৈরী হতো না। এই একাডেমির সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেদিন সময় দেবেন সেদিনই আমরা আরো বড় পরিসরে বর্ণাঢ্য আয়োজনে সারা বাংলাদেশ জুড়ে আয়োজন এবং উদযাপন করবো।”- লিয়াকত আলী লাকী, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। বাঙালি সংস্কৃতির প্রচার-প্রসার ও বিশ্বময় সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে জাতীয় সংস্কৃতি ও কৃষ্টির উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষন ও প্রসারের মাধ্যমে সকল মানুষের জন্য শিল্প সংস্কৃতির প্রবাহ তৈরি করে শিল্প-সংস্কৃতিঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গঠনের অভিলক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বাংলা ৬ ফাল্গুন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ৫০ বছর পূর্তি ও সূবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বছরব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সোমবার বিকাল ৪ টা থেকে শুরু হয়েছে বছরব্যাপী উদযাপন। আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত সচিব খলিল আহমদ। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন “বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শাখা শুধু দেশে নয়, বিদেশেও হবে। জেলা উপজেলা ছাড়িয়ে দেশের বাহিরেও হবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল সেন্টার।”
খলিল আহমদ আরো বলেন “সংস্কৃতিবান না হলে অসাম্প্রদায়িক হওয়া যায় না, যারা নিয়মিত সংস্কৃতির চর্চা করে অনুশীলনের মধ্যে থাকে তারা অন্য সবার থেকে চিন্তা চেতনায় এগিয়ে থাকে।”
এর আগে স্বাগত বক্তব্য প্রদান বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব জনাব সালাহউদ্দিন আহাম্মদ। ৫০ বছরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নানামুখী কার্যক্রম এবং জাতীয় পর্যায়ে সংস্কৃতি চর্চায় একাডেমির ভুমিকা তুলে ধরেন তিনি। পরে সভাপতির বক্তব্য প্রদান করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।
তিনি বলেন “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি না হলে এই একাডেমিও তৈরি হতো না। এই একাডেমির সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেদিন সময় দেবেন সেদিনই আমরা আরো বড় পরিসরে বর্ণাঢ্য আয়োজনে সারা বাংলাদেশ জুড়ে আয়োজন এবং উদযাপন করবো।
মহাপরিচালক ঘোষণা করেন “আমরা আর্ট মার্কেট শুরু করছি। শিল্পীদের নানা অনুষঙ্গ, শিল্পকর্ম এতে বিক্রি হবে, আমরা বাজারটি তৈরি করার মধ্য দিয়ে পেশাবৃত্তিক শিল্পচর্চায় শিল্পীদের নিযুক্ত করতে চাই। আমরা আর্ট মার্কেটের এই ধারা অব্যাহত রাখবো, আমরা প্রতি ৩ মাস পরপর এই আর্ট মার্কেট আয়োজন করবো।”
তিনি আরো বলেন “আগামী একবছর আমরা তৃণমুল পর্যায়ে উপজেলা- ইউনিয়নকে বেশি প্রাধান্য দেবো। আমাদের ডাটাবেজে আমরা সারাদেশের সকল শিল্পীকে সেখানে সংযুক্ত করব আমি বিশ্বাস করি লক্ষাধিক শিল্পী সেখানে যুক্ত হবে এবং এটি হবে অন্যতম প্লাটফর্ম”।
এরপর পরিবেশিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বছরব্যাপী আয়োজনের ১ম দিনে শুরুতেই সমবেত সঙ্গীত। “একি অপরুপ রুপে মা তোমায়” পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিশু- কিশোর সঙ্গীত দল। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা অবলম্বনে ‘বীরপুরুষ’ পরিবেশন করে বাংলোদেশ শিশু নৃত্য দল। এছাড়াও পরবেশিত হয় নৃত্য “এসো শ্যামলো সুন্দরো” পরিবেশন করে একাডেমির প্রতিশ্রুতিশীল নৃত্যদল। এছাড়াও পরিবেশিত হয় ধামাইল নৃত্য, বাউল গান, শিশু কন্ঠশিল্পীদের অভিভাবকদের অংশগ্রহণে দলীয় পরিবেশনা “ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা” সমবেত নৃত্য “আজ যত যুদ্ধবাজ”, ‘বিপুল তরঙ্গ রে,’ ‘চলো বাংলাদেশ’ এবং সমবেত সঙ্গীত “মঙ্গল হোক এই শতকে মঙ্গল সবার”।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে সূবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আজ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ থেকে শুরু হয়েছে সমসাময়িক নান্দনিক সৃজনকৃত শিল্পকর্ম নিয়ে ভিন্ন ধর্মী আয়োজন শিল্প বাজার বা আর্ট মার্কেট। সমসাময়িক নান্দনিক সৃজনকৃত শিল্পকর্ম/শিল্পপণ্য প্রদর্শন ও বিক্রয়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ উদ্বোধন করা হয়েছে “শিল্প বাজার- ২০২৪”। এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য শিল্পী হাশেম খান, জনাব খলিল আহমদ, সচিব, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, একাডেমির মহাপরিচালক জনাব লিয়াকত আলী লাকী এবং সচিব সালাহউদ্দিন আহাম্মদ। আলোচকরা বলেন, “সমকালীন শিল্পচর্চার প্রেক্ষাপটকে বিবেচনা করে নান্দনিক জীবনের জন্য শিল্পের প্রসার, পেশাভিত্তিক শিল্পচর্চায় ’শিল্প বাজার’, নিজ নিজ শিল্পকর্ম বা শিল্পপণ্য তৈরিতে শিল্পীকে আরো বেশী উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করবে। এছাড়াও শিল্পী ও শিল্পমাধ্যমের সঙ্গে সম্পৃক্তদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জীবিকা নির্বাহের পন্থা হিসেবেও বিবেচনা করা যেতে পারে। এর পথ ধরেই শিল্প-সংস্কৃতিঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গঠনে আমরা নানা ক্ষেত্র প্রসারিত করতে পারি।”
শিল্প বাজারের এই আয়োজনকে আরো বিস্তৃত করার লক্ষ্যে দেশের অন্যতম শিল্প ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ, শিল্পী ও উদ্যোক্তাগণদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। “শিল্প বাজার- ২০২৪” এ মূলত শিল্পী, শিল্প- উদ্যোক্তাদের তৈরি করা শিল্পকর্ম/ শিল্পপণ্য দেশের জনগণের কাছে পৌছে দেওয়ার একটি ক্ষেত্র তৈরি করবে যা শিল্পসম্মত ক্রেতা ও শিল্প সংগ্রাহক হতে উদ্বুদ্ধ করবে। এ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে চারুশিল্পের সমকালীন ধারা, শিল্পকর্ম, ঐতিহ্যবাহী পণ্য, উদ্যোক্তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সকল মাধ্যমের তৈরী সৃজনশীল পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রয়ের লক্ষ্যে অনন্য সম্ভার ‘শিল্পবাজার ২০২৪’ এর উদ্বোধন করা হয়। এরপর রাত ৮.০০টায় অনুষ্ঠিত হয় শিল্পবাজার ব্যান্ড সংগীত। “স্পন্দন’এর শিল্পীদের ব্যান্ড সঙ্গীত উপভোগ করেন আগত দর্শকরা।
‘নান্দনিক জীবনের জন্য শিল্পের প্রসার পেশাভিত্তিক শিল্পচর্চায় শিল্প বাজার’ প্রতিপাদ্যে আর্ট