• শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫, ০১:০৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
টঙ্গীতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত স্বপ্ন পূরণের পথে দাবাড়ু মুনতাহা, পাশে দাঁড়ালেন সাবেক ফুটবলার আমিনুল হক টঙ্গীতে গলায় ফাঁস দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা :  মৃত্যু ঘিরে রহস্য গাজীপুরে হানিট্র্যাপের অভিনব কৌশলে যেভাবে শিকার হন যাত্রীরা ট্রাভেল ব্যাগে মাথা বিহীন আট টুকরো মরদেহ উদ্ধারের রহস্য উদ্ঘাটন : স্ত্রীকে অনৈতিক কথা বলার কারণে খুন হয় অলি : মূলহোতা সহ আটক-৩ সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে হত্যার প্রতিবাদে গাছা সাংবাদিক ক্লাবের উদ্যোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ টঙ্গীতে ট্রাভেল ব্যাগে মিলল যুবকের খণ্ডিত মরদেহ গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা, জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি মরহুম বাচ্চু মিয়ার স্মরণে টঙ্গীতে দোয়া ও ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত  টঙ্গী থানা বিএনপির উদ্দ্যোগে ৫ আগস্ট বিজয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‍্যালি অনুষ্ঠিত

গাজীপুরে হানিট্র্যাপের অভিনব কৌশলে যেভাবে শিকার হন যাত্রীরা

grambarta / ২০ ভিউ
প্রকাশের সময় : রবিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৫

প্রতিকি ছবি 

নিজস্ব প্রতিবেদক : গাজীপুরে প্রতারণার এক নতুন নাম ‘হানিট্র্যাপ’। এই ট্র্যাপে রয়েছে কয়েক ডজন নারী। তারা পুরুষ— বিশেষত পথচারীকে টার্গেট করেন। পরে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে তাদের অন্যান্য সদস্যদের সহযোগিতায় জিম্মি করে সর্বস্ব লুটে নেন। নগরীর চান্দনা চৌরাস্তায় এই চক্রের কয়েকটি গ্রুপ রয়েছে। সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডের পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে এই হানি ট্র্যাপ গ্রুপ। হানি ট্র্যাপের মাধ্যমে ছিনতাই করত গ্রেপ্তার কেটু মিজান ও তার স্ত্রী গোলাপি এবং তার চক্রের সদস্যরা।

কেটু মিজানের ভয়ংকর এক অন্ধকার জগৎ :

হানি ট্র্যাপের মাধ্যমে ছিনতাইয়ের মূল হোতা কেটু মিজান। গ্রেপ্তারের পরও তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ থেমে থাকেনি। পুলিশের কড়া পাহারা ও পিছমোড়া করে হাতকড়া পরা অবস্থায় গতকাল শনিবার আদালতে নেওয়ার সময় মিজান সবার উদ্দেশে বলে ওঠেন, ‘আপনারা নাটক-সিনেমা-ছবি করেন, আমি করি রিয়েল। গাজীপুরের সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে গলা কেটে হত্যার পরও তার মধ্যে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। বরং আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময়ও চোখ পাকিয়ে সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের সিঁড়িঘাট মিলন বাজার এলাকার মোবারক হোসেনের ছেলে কেটু মিজান গাজীপুরে এ ড়ে তোলেন এক অপরাধ রাজ্য। মেলান্দহ থেকে ২৫-৩০ বছর আগে তার পরিবার চলে যায় রংপুর। পরবর্তীতে একই এলাকার মো. সুলাইমানের মেয়ে পারুল আক্তার গোলাপীকে বিয়ে করে সঙ্গে নিয়ে মিজান চলে আসেন গাজীপুরে। তার গড়ে তোলা জগতের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন স্ত্রী। দুজনে মিলে গাজীপুর মহানগরের ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা মোড় এলাকায় নিয়ন্ত্রণ করত এই ছিনতাইকারী চক্র। কেটু মিজান ও গোলাপি গ্রুপের সদস্য ছিলেন সাংবাদিক তুহিন হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাবনার ফরিদপুর উপজেলার সোনাহারা গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে মো. স্বাধীন (২৮), খুলনার সোনাডাঙ্গা উপজেলার ময়লাপোতা এলাকার হানিফের ছেলে আল আমিন (২১), কুমিল্লার হোমনা থানার আন্তপুর গ্রামের হানিফ ভূঁইয়ার ছেলে শাহ জালাল (৩২), পাবনার চাটমোহর থানার পাঁচবাড়িয়া গ্রামের কিয়ামুদ্দিনের ছেলে ফয়সাল হাসান (২৩), শেরপুরের নকলা থানার চিতলিয়া গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে সাব্বির সুমন (২৬) এবং ত্রিশালের শহীদুল ইসলাম। ইতোমধ্যে এ ৮ জনকেই গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় হত্যা, ধর্ষণ, মাদক, ছিনতাইসহ বিভিন্ন ধারায় ২৯টি মামলা রয়েছে। শুধু মিজানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৫টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার রাতে কেটু মিজান ও গোলাপীর প্রতারণা ফাঁদে পা দিয়েছিলেন শেরপুরের বাদশা মিয়া নামের এক যুবক। যার শেষ পরিণতির শিকার হয়েছেন দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান তুহিন। চান্দনা চৌরাস্তায় কয়েকজন দোকানি ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চান্দনা চৌরাস্তার সাবেক বাসন ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত কার্যালয়ের সামনে, জাগ্রত চৌরঙ্গীর আশেপাশে ও বিভিন্ন গলিতে সন্ধ্যার পর থেকে অবস্থান নেয় হানি ট্র্যাপের সদস্য, দেহব্যবসায়ীরা। সময় সুযোগ বুঝে তারা টার্গেট করে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত সাধারণ মানুষ বিশেষত পথচারীকে হানি ট্র্যাপে ফাঁদে ফেলে সব কিছু লুটে নেয় তারা। স্থানীয়রা জানায়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে নানা কাজে চান্দনা চৌরাস্তা হয়ে প্রতিদিন অন্তত চার লাখ মানুষ যাতায়াত করে। গাজীপুরে বিভিন্ন কল-কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরাও চৌরাস্তা হয়ে যাতায়াত করেন। তাদের মধ্যে দূরদূরান্ত থেকে অনেক নিরীহ নারী-পুরুষও থাকেন। দিনের বেলা টানা পার্টি তাদের টার্গেট করে। ঢাকা মহাসড়ক, টাঙ্গাইল মহাসড়ক, ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও গাজীপুর অভিমুখী মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে টানা পার্টির সদস্যরা ভ্যানিটি ব্যাগ, পার্স, মানিব্যাগ, কানের দুল, গলার চেইন ইত্যাদি নিয়ে ভিড়ের মধ্যে মিশে যায়। তবে তাদের প্রধান টার্গেট থাকে মোবাইল ফোন। হেঁটে ফোনে কথা বলতে বলতে চলার সময় বা বাসে বসে ফোনে কথা বলার সময় জানালা দিয়ে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায় চক্রের সদস্যরা। প্রতিদিন এ ধরনের অহরহ ঘটনা ঘটছে। নানা কারণে ভুক্তভোগীদের অনেকেই পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন না। সূত্র জানায়, হানি ট্র্যাপের সদস্যদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে এক ডজনের বেশি সুন্দরী তরুণী। কারো কাছে টাকা বা মূল্যবান কিছু থাকলে তারা টার্গেট করে। টার্গেট করা ব্যক্তিকে তরুণী দিয়ে হানি ট্র্যাপে ফেলে মারধর করে মানিব্যাগসহ জিনিসপত্র কেড়ে নেওয়া হয়। বাসন থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুর মহানগরের তেলিপাড়ায় বাবার লাশ অ্যাম্বুলেন্সে করে ফিরছিলেন দুই যুবক। চান্দনা চৌরাস্তায় পৌঁছলে ছিনতাইকারীরা গাড়ি থামিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে লাশবাহী গাড়ির যাত্রীদের টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়। পরে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হন ফয়সাল। তিনি পাবনার চাটমোহরের কিয়ামুদ্দিনের ছেলে। এর আগে ২১ ফেব্রুয়ারি বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে দিনাজপুর যাওয়ার পথে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে একটি পরিবার। লাশ আনতে যাওয়ার কথা বলেও রক্ষা পায়নি তারা। ভুক্তভোগীরা তাৎক্ষণিক পুলিশের সহযোগিতায় অন্য একটি গাড়িতে গন্তব্যে রওনা করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, দিন দিন ছিনতাইকারীদের রাজ্যে পরিণত হয়েছে চান্দনা চৌরাস্তা। এসব ছিনতাইকারীর অনেকেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। পুলিশ অনেক সময় তাদের গ্রেপ্তার করে। কয়েক দিনের মধ্যেই তারা জামিনে বেরিয়ে এসে ফের ছিনতাইয়ে জড়ায়। সাংবাদিক তুহিন খুনের দিন সন্ধ্যায় এই চক্রের সদস্যরা এক অটোচালককে পিটিয়ে তার অটো ছিনতাই করে নিয়েছে। নেশাগ্রস্ত থাকায় সামান্য কারণেই তারা কুপিয়ে সব লুটে নেয়। ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ায় গত বছর চান্দনা চৌরাস্তার বনরূপা সড়কে তানজিলা আক্তার (৩৮) নামের এক পোশাক শ্রমিককে ছুরিকাঘাতে খুন করে ছিনতাইকারীরা। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ছিনতাইয়ের ঘটনায় বেশির ভাগ পথচারী বা ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ করেন না। এ জন্য অনেক সময় বিষয়টি পুলিশ অবগত থাকে না। এ ব্যাপারে গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার রবিউল হাসান বলেন, চান্দনা চৌরাস্তায় আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগেও ছিল। সাংবাদিক তুহিন হত্যাকাণ্ডের পর তা আরও জোরদার করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সিসিটিভি লাগাতে বলা হয়েছে, যাতে অপরাধীরা পালিয়ে যেতে না পারে। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক একটি নিরাপত্তা টিমের পাশাপাশি কুইক রেসপন্স টিম থাকবে। ছিনতাইকারীসহ অপরাধীদের গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সূত্র : কালবেলা


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর