মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে “মায়ের ভূমিকা”
সংগৃহীত ছবি
★নিলুফার লিনা★
মিশরীয় সাহিত্যিক যথার্থই বলেছেন। “মাইক্রোড়ই শিশুর প্রাথমিক বিদ্যালয়” সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে একজন মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। একজন আদর্শবান মা-ই তার সন্তানকে সু-শিক্ষায় গড়ে তুলতে পারে। কেননা সন্তানের প্রথম শিক্ষাগুরুই হচ্ছে তার মা। মা তার সন্তানকে শিশুকালে যেভাবে লালন-পালন করবেন, যা আদব-কায়দা, শিষ্টাচার শেখাবেন সন্তান বড় হলে সেই কাজগুলোই করবেন। তবে তিনি যদি সন্তানকে ভুল শিক্ষা দেন এর খেশারত কিন্তু পুরো সমাজকেই দিতে হয়। আর এ জন্যই নেপোলিয়ান বোনাপার্ট বলেছিলেন- “আমি তোমাদের আমাকে একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দিবো”। গুনগত শিক্ষায় একুশ শতকের একটি অন্যতম চাওয়া। উত্তম শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজন অনুকূল পরিবেশ। আর এই পরিবেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের। শিক্ষার্থী শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্পৃত্ততাই গড়ে দিতে পারে গুনগত শিক্ষার মজবুত ভিত। আমাদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থার ২৪ ঘন্টায় মাত্র ৬ ঘন্টা শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের আইভিশনে থাকে। আর বাকি আঠারো ঘন্টা থাকে মায়ের কাছে। সেক্ষেত্রে শিক্ষায় সফলতার অনেকটাই মায়ের উপর নির্ভর করে, বিশেষ করে প্রাথমিক স্তরে। প্রথাগতভাবে বাংলাদেশের মায়েরা সাধারণত তাঁদের সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যান এবং ক্লাস শেষে বাসায় নিয়ে আসেন। কিন্তু এই মায়েরাই শিশুদের গুনগত মানের শিক্ষা অর্জনে অনন্য ভূমিকা পালন করতে পারেন। তারা নিয়মিত শিশুদের অগ্রগতি ও শিখন ফলাফল সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে পারেন। তারা কীভাবে বাড়িতে তাদের শিশুদের সহায়তা করবে, তা শিক্ষকের কাছ থেকে শিখে নিতে পারেন। শিশুদের বাড়ির কাজ, পরীক্ষার ফলাফল, স্কুলে করা সামগ্রিক মূল্যায়ন যাচাই করে শিশুদের কর্মক্ষমতা সম্পর্কে উপকারী জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। যা শিশুদের গুনগত শিখন অর্জনকে অধিক সহজতর করবে। বেশ কিছু গবেষনায় দেখা গেছে শিশুদের শেখার ক্ষেত্রে মা-বাব, বিশেষ করে মা’কে সম্পৃক্ত করার অনেক সুবিধা আছে। যেমন শেখার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি। শিশুদের অধিক কৃতিত্ব অর্জন, উন্নত ফলাফল এবং সামাজিক বন্ধন বৃদ্ধি সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক। যা শিক্ষার মান উন্নয়নে শক্তিশালী অবদান রাখতে পারে। উদাহরণস্বরুপ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডাল্ট শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অর্জনকে ১৫ শতাংশ তরান্বিত করা যেতে পারে এবং একটি শিশুর পড়ার বয়স ছয় মাস পর্যন্ত এগিয়ে নিতে পারে। শিশুর শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে মায়ের সচেতনতা আন্তরিকতা এবং বিদ্যালয়ের সাথে মায়ের সম্পৃক্ততা অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। তাই একটি বিদ্যালয়ের সার্বিক কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত ও বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে মায়েদের অংশগ্রহনের সুযোগ ও মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিতভাবে মা সমাবেশ উঠান বৈঠক। সেরা মায়ের স্বীকৃতি প্রভৃতি গঠনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী। পরিশেষে বলা যায়, যেহেতু প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়টি শিশুরা পরিবার থেকেই রপ্ত করে বেশী তাই পরিবার তথা মা’কেই শিক্ষার সাথে ও তপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকতে হবে। তবেই শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়ন সম্ভব হবে। নয়তো গিনিপিগের মতো ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বিদ্যালয় নামক গবেষণাগার গবেষণাই করতে হবে তা শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠবেনা কখনোই।